বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এখন চলছে বড় দুই জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনা।
দেশটির বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এখন দুইটি জোটে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে আগে এসব জোটে চলছে আসন বণ্টন নিয়ে দর কষাকষি। দুই একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে দলগুলো বলছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জোটের শরীকদের ৬০ থেকে ৭০টি আসন দেয়া হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের কাছে একাই ১০০ আসন চেয়েছে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলছেন, ”১০০ সিটের ওপরেই আমাদের আলোচনা চলছে। যাচাই বাছাই করে, এলাকায় কার জনপ্রিয়তা বেশি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করে প্রার্থী বাছাইয়ের চেষ্টা চলছে।”
যেখানে জাতীয় পার্টি দাবি করছে ১০০ আসন, অথচ সব শরীক মিলিয়ে আওয়ামী লীগ দিতে চাইছে ৬০/৭০টি, সেটা কতটা জটিলতা তৈরি করতে পারে?
রুহুল আমিন হাওলাদার বলছেন, ”আমরা আশা করি কোন জটিলতা থাকবে না, অতিসহজেই আমাদের দুইটি দলই অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো।”
কিছুদিন আগেও জাতীয় পার্টি থেকে বলা হয়েছিল যে, তারা আলাদাভাবে নির্বাচন করবেন। এখন আবার জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে।
তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হতে যাবে?
মি. হাওলাদার বলছেন, রাজনীতিতে শেষ মুহূর্তের যে সমীকরণ হয়, আমাদের সেটাই হতে যাচ্ছে। আমরা পূর্বেই বলেছি যে, রাজনীতিতে শেষ কথা নেই।
“নির্বাচনের পূর্বে অনেক সমীকরণ হয়। এখন যেটা হবে, শেষ মুহূর্তে সেটাই চূড়ান্ত, সেটাকে নির্ভর করে আমাদের এগোতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি মিলে একযোগে আমরা কাজ করবো।”
জামায়াতে ইসলামী ও ক্ষুদ্র কয়েকটি দল সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আগে থেকে ২০দলীয় জোট গঠন করেছিল। সম্প্রতি গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য এবং এলডিপি ও বিকল্পধারা একাংশকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরেকটি জোটরে অংশীদার হয়েছে।
সেখানে শরীকরা কতটি আসন পাবে বা কিভাবে আসন ভাগাভাগি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নিজেদের প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি এখনো এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আপাতত ৩০০ আসনেই বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। পরে শরীকদের সঙ্গে আলোচনার পরে একজন প্রার্থী চূড়ান্ত রেখে বাকিদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
কিন্তু শরীক দলগুলো বিএনপির কাছে কতগুলো আসন দাবি করছে?
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরীক দল নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জোটের আসন বণ্টন সম্পর্কে বলছেন, ”এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা প্রার্থীদের তুলে ধরছি যে, আমাদের এই প্রার্থীরা আছেন, যারা এই বিবেচনায় নির্বাচন করার যোগ্য।”
“বিভিন্ন দল তাদের তালিকা দিচ্ছেন। এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ দলের ব্যাপার ২০ দল দেখবে।”
জামায়াতে ইসলামীর নেতারা জানিয়েছেন, তারা বিএনপির কাছে ৫০টি আসন চেয়ে তালিকা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনহীন এই দলটি এসব আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে চায়। বিএনপির সঙ্গে তাদেরও আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে অন্য শরীক দলগুলো থেকেই এরকম আসন দাবি করা হচ্ছে। শরীক দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে কতটা জটিলতা হচ্ছে?
মি. রহমান বলছেন, ”জটিলতা নেই। আমি মনে করছি, কাল পরশুর মধ্যে একটি বিষয়টি আমাদের সমাধান করতে হবে। সেভাবেই কথাবার্তা এগোচ্ছে। ”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো কোন প্রতীকে তারা নির্বাচন করবেন?
মাহমুদুর রহমান বলছেন, ”আমরা জোট যখন বসেছি, তখন আলাদা আলাদা করে করলে ঐক্যের প্রতীক থাকে না।”
“ঐক্যের জন্য একটি প্রতীক থাকা দরকার, সেজন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় যেটা হবে, সেটাই নেবো আমরা, তাই ধানের শীষ বেছে নিয়েছি।”
সূত্র, বিবিসি